রাঙ্গাবালীতে ইউরিয়া সার বাড়তি দামে বিক্রির অভিযোগ

রাঙ্গাবালীতে ইউরিয়া সার বাড়তি দামে বিক্রির অভিযোগ

নিয়ামুর রশিদ শিহাব 

চলতি আমন মৌসুমে বৃষ্টি-বর্ষা কম হওয়ায় পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় কৃষকদের কাছে ইউরিয়া সারের চাহিদা বেড়েছে। এ সুযোগে সরকার নির্ধারিত দামের চাইতে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা বস্তাপ্রতি ১০০-২০০ টাকা বাড়তি দামে সার বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে নায্য দামে সার কিনতে না পেরে হতাশ কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে উফশী ও স্থানীয় জাতের ৩৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ করা হয়েছে। এজন্য গত সেপ্টেম্বর মাসে ৩৫০ মেট্রিকটন ইউরিয়া সার বরাদ্দ দেওয়া হয়। চাহিদা থাকায় তখন উপ-বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ২২০টন। এছাড়া চলতি অক্টোবর মাসে ১৯৬টন সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কৃষি বিভাগের দাবি, চলতি আমন মৌসুমে বৃষ্টি-বর্ষা তেমন হয়নি। সম্প্রতি টানা প্রখর রোদ থাকার কারণে কৃষকদের কাছে সারের চাহিদা বেশি।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, সরকার কর্তৃক ইউরিয়া সারের ৫০ কেজির একটি বস্তার দাম ৮০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। অথচ সারের চাহিদা বেশি থাকায় উপজেলা রাঙ্গাবালী, ছোটবাইশদিয়া, বড়বাইশদিয়া, চালিতাবুনিয়া ও চরমোন্তাজ ইউনিয়নে বিসিআইসি অনুমোদিত ডিলার ও বেশিরভাগ  খুচরা বিক্রেতারা ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে বাধ্য হয়ে কৃষকদের চড়া দামেই সার কিনতে হচ্ছে। এতে অনেকটাই সার ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ায় হতাশ কৃষকরা। সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, এ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে সার বিক্রির জন্য  চারজন বিসিআইসি ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক ইউনিয়নে নয়জন করে খুচরা বিক্রেতা রয়েছে।
চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের মধ্য চালিতাবুনিয়া গ্রামের কৃষক সোহেল মীর বলেন,
নদ-নদীতে মাছ ধরে আর কৃষি কাজ করে জীবন চলে। অনেক কষ্ট করে এবার দুই কানিতে আমন ধান দিছি। ইলিয়াসের কাছ থেকে ৯২০ টাকা করে সারের বস্তা কিনতে ওইছে। তার নাকি অনেক খরচ হয়। এখন আরোও বাড়াইছে। ৯৫০-৯৬০ টাকায় বিক্রি করে। চালিতাবুনিয়া বাজারের খুচরা সার বিক্রেতা ইলিয়াস এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী ইলিয়াস হাওলাদার বলেন, এক বস্তা সারের সরকারি রেট (দাম) ৮০০ টাকা। কিন্তু সর্বোচ্চ ৮২০ টাকায় বেচতে পারি। একটা সার ঘরে পৌঁছাইতে ৪০ টাকা খরচ হয়। আমাদের এলাকায় বিসিআইসি ডিলার নেই। হালিমচর স্লুইসঘাট থেকে সার আনতে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের কাজির হাওলা গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানান, বৃষ্টি না হওয়ায় এখন ক্ষেতে সার প্রয়োজন। কিন্তু ডিলার কিংবা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সার কিনতে গেলে বলে- নাই। কিন্তু বাড়তি ১০০-২০০ টাকা দিলেই তাদের কাছে সার পাওয়া যায়। সঠিকভাবে সংশ্লিষ্টদের তদারকি না থাকায় ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছেখুশি মত চড়া দামে কৃষকদের কাছে সার বিক্রি করছে। রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের বিসিআইসি অনুমোদিত সারের  ডিলার লাহারী এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী ফারুক লাহারী বলেন, আমি মেইন ডিলার। আমার বুঝেই আমি মাল বিক্রি করতেছি, সরকারি রেটে। আমি স্থানে থাকি, তাই কৃষকরাতো আমার কথাটাই বেশি কইবে। কৃষকরা আমাকে বলেছে, খুচরা বিক্রেতারা বেশি রেটে বিক্রি করে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ধীমেন মজুমদার বলেন, বেশি দামে যাতে সার বিক্রি করতে না পারে, এজন্য মনিটরিং করা হচ্ছে। বেশি দামে সার বিক্রি করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, এ মৌসুমে বৃষ্টি-বর্ষা কম। কিছুদিন ধরে টানা রোদ থাকায় কৃষকদের কাছে সারের চাহিদা বেশি। চলতি মাসের বরাদ্দের সার কয়েকদিনের মধ্যে এলেই কৃষকদের চাহিদা মিটবে বলে আশা করি।